আটাশটি ক্যাডারের মধ্যে শুরু থেকেই সর্বাধিক বঞ্চিত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অনেকেই পছন্দ তালিকার প্রথমে রেখেই এ ক্যাডারে এসেছিলেন। শিক্ষকতাকে পেশা নয়, ব্রত হিশেবে নিতে চেয়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু, ক্রমাগত বঞ্চনা, অপ্রাপ্তি, বৈষম্য- শিক্ষক কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহাকে হ্রাস করে দিয়েছে।
পদোন্নতি ক্যাডার জবের একটি নিয়মিত, স্বাভাবিক, রুটিন ওয়ার্ক হলেও, শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি বরাবরই হয়েছে ব্যতিক্রমী ধারায়।
অন্যান্য ছাব্বিশ ক্যাডারের সাথে বিসিএস প্রশাসন, পররাষ্ট্র ও পুলিশ ক্যাডারের সাথে বৈষম্য দীর্ঘদিন আলোচিত হয়েছে। বৈষম্য হ্রাসের জন্য অষ্টম পে-স্কেল বাস্তবায়নের আগে কর্মবিরতিও করেছিল ছাব্বিশ ক্যাডার।
কিন্তু, শিক্ষা ক্যাডার এমন একটি বিচিত্র ক্যাডার যেখানে নিজ ক্যাডারের মধ্যেও বৈষম্যের অন্ত নেই। ১৬তম বিসিএসে যোগদান করে যেখানে মৃত্তিকা বিজ্ঞানের একজন শিক্ষক অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন, সেখানে একই বিসিএসের দর্শন বিভাগের একজন শিক্ষক রয়ে গেছেন সহকারী অধ্যাপক। পাঁচ বছর পূর্তিতে যেখানে ৩০তম বিসিএসের বাংলার একজন প্রভাষক হয়েছেন সহকারী অধ্যাপক, সেখানে ২৪তম বিসিএসের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একজন শিক্ষক প্রমোশনের সমস্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, পদ স্বল্পতার অযুহাতে প্রভাষকই থেকে যাচ্ছেন।
সিলেকশ গ্রেড, টাইম স্কেল বাতিল করার পর আন্তঃক্যাডার ও অন্তঃক্যাডার বৈষম্য ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। কয়েক মাসের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছে ২৬তম ও ৩০তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাবৃন্দ।
অতি সম্প্রতি ৫ বছর চাকরি পূর্তিতে প্রশাসন ক্যাডারসহ অন্যান্য কিছু ক্যাডারে যেমন পুলিশ, পররাষ্ট্র, কৃষি ইত্যাদি ক্যাডারে ৩১তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। সেখানে বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সমাপ্তি, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও অন্যান্য সকল যোগ্যতা অর্জন করেও পদোন্নতির বিবেচনায় আসছেন না শিক্ষা ক্যাডারের ৩১তম বিসিএসের ক্যাডার কর্মকর্তারা।
উপরের দিকে পদ স্বল্পতার অযুহাতে বঞ্চিত করে রাখা হচ্ছে এসব কর্মকর্তাদের। অথচ, প্রশাসন ক্যাডারের ক্ষেত্রে দেখছি এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। পদ না থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি পাচ্ছেন তারা। সুপার নিউমারারি পদসৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতির দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন শিক্ষক নেতারা। কিন্তু তাদের কথায় কান দেবার যেন কেউ নেই।
অধ্যাপকের বেতন গ্রেড বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে ৩য়, কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারে সেটি ৪র্থ। এখানেও বৈষম্য। কলেজের অধ্যক্ষ পদে পদায়ন কিংবা মাউশি, নায়েমসহ সকল অধিদপ্তরে পদায়নের ক্ষেত্রে সিনিয়রিটি মানা হচ্ছে না।
চতুর্দশ বিসিএসের মাধ্যমে যোগদানকৃত কর্মকর্তা হচ্ছেন অধ্যক্ষ, অথচ তার অধীনে নবম বিসিএসের কর্মকর্তা আছেন বিভাগীয় প্রদান হিশেবে। যোগ্যতার মাপকাঠিতে ন্যায্য পদায়নেরও দীর্ঘদিনের দাবি শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের।
প্রমোশনের প্রহসন ছাড়াও, শিক্ষা ক্যাডারে নিয়মিত বদলি নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। কেউ কেউ বিভাগীয় শহরগুলোতে চাকরি করছেন যুগযুগ, আবার কেউ মফস্বলেই পড়ে আছেন। তিনবছর পরপর বদলির কথা বলা হলেও, এর প্রয়োগ ততোটা চোখে পড়ে না। বরং অভিযোগই বেশি শোনা যায়।
পদে পদে বঞ্চিত শিক্ষা ক্যাডারের সামগ্রিক বঞ্চনা হ্রাসে সরকার নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে পারেন-
১. প্রতিবছর দুইবার ডিপিসি করা।
২. পদোন্নতি যোগ্য সকলকে পদোন্নতি দেয়া। উপরে পদ থাকা জরুরী নয়।
৩. যোগ্যতা, মেধার ভিত্তিতে অনার্স, মাস্টার্স কলেজে পদায়ন দেয়া।
৪. একই পদে বা কলেজে বা প্রশাসনিক কিংবা অধিদপ্তরে তিন বছরের বেশি থাকতে না দেয়া।
লিখেছেন: ওয়াদুদ খান
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, ৩১তম বিসিএস
প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ, ৩১তম বিসিএস
EmoticonEmoticon