মাওলানা সা’দ কান্ধলভী কি আসলেই ভুল বয়ান করছেন?


উম্মাতের জোড়-মিল-মহব্বত, ঐক্য ও সম্প্রীতির বিশ্বব্যাপী এ দাওয়াত ও তাবলীগের ময়দানকে বিক্ষিপ্ত করে আমরা উম্মাতকে কি উপহার দিতে চাই?
হযরতজী মাওলানা যুবায়েরুল হাসান (রহ) এর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমরা মাওলানা সা’দ সাহেবকে নিয়ে কোন বিভ্রান্তিকর কথা শুনিনি। কিন্তু যেই মাওলানা যুবায়েরুল হাসান সাহেবের মৃত্যু হল, সেই “আলমী শূরা চাই” নামক ফিতনার সৃষ্টি করল পাকিস্তান। পরবর্তীতে সেই ফিতনাতে কান দিল ভারতের কিছু মুরব্বী। অথচ ১ম তিন বুজুর্গ হজরতজী মাওলানা ইলিয়াস, মাওলানা ইউসুফ, মাওলানা ইন’আমুল হাসান (রহ) এর যামানায় আলমী শূরা নয়, একক আমীরের ভিত্তিতেই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ পরিচালিত হয়েছে। মাওলানা ইন’আমুল হাসান মৃত্যুর পূর্বে আলমী শূরাভিত্তিক কাজ চলবে-এই উদ্দেশ্যে নয়, বরং পরবর্তী আমীর/জিম্মাদার তায়ী করার জন্য ১০ (একজন অনুপস্থিত থাকায় ৯ জন) সদস্যের একটি শূরা মনোনীত করেন, যাদের দায়ীত্ব ছিল শুধু নিজেদের মধ্যে একজন আমীর তায়ী করা (ঠিক উমার রা. যেভাবে ৬ জনের একটি শূরা বানান, উদ্দেশ্য এই ছিল না যে, শূরাভিত্তিক কাজ চলবে বরং উদ্দেশ্য ছিল, নিজেদের মধ্যে মাশওয়ারাহ (পরামর্শ) করে একজনকে আমীর তায়ী করা)।
মাওলানা সা’দ কান্ধলভী কি আসলেই ভুল বয়ান করছেন? নাকি আমরা ফিতনার স্রোতে গা ভাসিয়ে তা তাহকীক করতে ভুলে গিয়েছি?

কিন্তু উক্ত ৯ জন আহলে শূরা একক আমীরের উপর একমত না হতে পারায়, উনাদের মাশওয়ারার জিম্মাদার মিয়াজি মেহরাব সাহেব (রহ) এই ফায়সালা করেন যে, মাওলানা ইজহারুল হাসান, মাওলানা যুবায়েরুল হাসান ও মাওলানা সা’দ এই কাজ নিয়ে (জিম্মাদার হিসাবে) চলবে।
উক্ত ৩ জনের মধ্যে ২ জন বুজুর্গের মৃত্যুর পর একমাত্র জীবিত জিম্মাদার মাওলানা সা’দ কান্ধলভী। ২০১৭ সালের টংগীতে বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশসহ শতাধিক দেশের আহলে শূরা ও জিম্মাদারদের উপস্থিতিতে মাওলানা সা’দ সাহেবকে লিখিতভাবে আলমী বা বিশ্ব আমীর/জিম্মাদার হিসাবে মেনে নেওয়া হয়। বাংলাদেশের পক্ষে উক্ত ফায়সালায় সাক্ষর করেন ঐ সময়ের হালের ফায়সাল মাওলানা ফারুক সাহেব।
কিন্তু পাকিস্তানি সৃষ্ট আলমী শূরা নামক ফিতনা তারপরও বন্ধ হয় নি। মাওলানা যুবায়েরুল হাসান সাহেবের মৃত্যুর পর থেকেই আলমী শূরার দাবিদাররা উক্ত উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে মরিয়া হয়ে অযাচিত ও বাড়াবাড়িমূলকভাবে মাওলানা সা’দ সাহেবের ত্রুটি অন্বেষণে উঠেপড়ে লাগে, আবিষ্কার করে বয়ানের মধ্যে অযাচিত ভুল, মিথ্যা তোহমৎ, কল্পিত কাহিনী, হিংসা বিদ্বেষের অগ্নি দিয়ে চিত্রাঙ্কন করে একের পর এক বিকৃত ইতিহাস। মওদূদী, ইহুদীর দালাল, বাতিলপন্থীদের গুপ্তচর, গোমরাহ ইত্যাদি কোন গালি দেওয়াই বাদ রাখেনি। বাদ রাখেনি মিথ্যাচার, বিকৃতি ও বদগোমানি মিশ্রিত চটি বইয়ের রচনা, অনুবাদ ও সংকলন।
মাওলানা সা’দ সাহেব তাঁর বিভিন্ন বয়ানে যে বক্তব্য তাবলীগী মেহনত করনেওয়ালা সাথীদের যে ভাষায়, যে বুঝ দিয়ে বুঝিয়েছেন, সেই বুঝটাকে না নিয়ে, ভুল বুঝ নিয়ে, তাঁর বক্তব্যকে বিকৃত ও ভুলভাবে উপস্থাপন করে, তাঁর বিরুদ্ধে উপমহাদেশের প্রধান দীনি মাদ্রাসা দারুল উলুম, দেওবন্দ থেকে ফতোয়া চাওয়া হয়। আর স্বার্থসিদ্ধীতে সেগুলোকে অনলাইন ও অফলাইনে প্রকাশ ও ছাপানোর ব্যবস্থাও করা হয়।
দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতের সাথে যে সমস্ত উলামায়ে কেরাম সরাসরি জড়িত নয়, বরং অন্যান্য দীনি মেহনত বা ইসলামি রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত, তারাই বেশী এ ব্যাপারে আগ্রহ ও উদ্দীপনা দেখায়। কেননা নাবীওয়ালা এই দাওয়াতের মেহনতের সাথে তাদের অন্যান্য দীনি মেহনতের মধ্যে পার্থক্য থাকার কারণে, পূর্ববর্তী ঈর্ষা ও বিদ্বেষ উক্ত ব্যপারে ভূমিকা রাখতে উৎসাহ ও আগ্রহের ইন্ধন জোগায়। মাওলানা সা’দ সাহেবকে বিতর্কীত করে উৎখাত করতে পারলে তারা দীর্ঘ দিনের তাবলীগী সাথী ভাইদের উপর আক্রোশ ও জিঘাংসা অনেকটাই মিটাতে পারবে। তাবলীগী সাথীদের উপর তাদের আক্রোশ অনেক পুরোনো। আর এর প্রধান কারণ হল, দীনি মেহনতের তরিকা, ভিত্তি ও মূলনীতি।
যাই হোক, তারা তাদের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে অনেকটাই সফল হয়েছে। শুধুমাত্র উলামা নামক খেতাব থাকার কারণে তাদের মিথ্যাচার ও ফিতনায় কান দিয়েছে সরল বিশ্বাসে অন্যান্য হক্কানি উলামাবৃন্দ, এমনকি কাকরাইলের কিছু উলামা শূরা। আর সাধারণ লোক ও সাধারণ সহজ সরল তাবলীগী সাথীভাইয়েরা এই কুচক্র ও ষড়যন্ত্র উপলব্ধি করতে না পেরে এই সমস্ত উলামাদের পক্ষ নিয়েছে। আর তাদের শেখানো বুলি আওরাচ্ছে যে, ব্যক্তি পূজা করা যাবে না, উলামাদের সাথে থাকতে হবে।
হায় আফসোস! অথচ অগণিত অসংখ্য উলামায়ে কেরাম মাওলানা সা’দ সাহেবের সাথে রয়েছে। তাঁরা স্রোতের হৈ হৈ, ঠিক ঠিক, আওয়াজে কান দেয় নি, বরং তাহকীক করে মাওলানা সা’দ সাহেবের পক্ষ নিয়েছে। এই হক তালাশকারী উলামাদেরই এক জামা’আত সঠিক তাহকীক ও পর্যালোচনা করে মাওলানা সা’দ সাহেবের নামে বর্ণিত ভুলগুলো কি আসলেই ভুল তা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছেন। অনেকেই ইতোমধ্যে এ গ্রন্থ পড়ে ফেলেছেন। যারা এখনও পড়েন নি, অথবা সন্দেহের মধ্যে আছেন বা বিভ্রান্তিতে পড়েছেন, তাদেরকে অনুরোধ করব বইটিকে নিরপেক্ষ ও পরিশুদ্ধ মনে পাঠ করে দেখবেন। আর কোনটি হক, তার সিদ্ধান্ত আপনি নিজেই নিবেন।
ওয়াস সালাম।
download link:
Previous
Next Post »