পরকীয়ার স্বীকৃতি নিয়ে ||| ফাতিহুল কাদির সম্রাটের কলাম

ছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত 


ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। কিছুদিন আগে আদালত সমকামিতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গতকাল আদালত স্বীকৃতি দিয়েছে পরকীয়াকে।

ভৌগোলিক অবস্থান ও ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক যোগাযোগের কারণে ভারতের যে কোনো বিষয় আমাদের প্রভাবিত করে। তাই এই রায়ের এদেশীয় প্রভাব নিয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। ভারতীয় সংস্কৃতিতে পরকীয়ার শেকড় অনেক গভীরে। বৈষ্ণব মতবাদে পরকীয়াবাদ নামে একটি প্রেমতত্ত্বই প্রচলিত। আমাদের রয়েছে মূল্যবোধের আলাদা স্বরূপ।

বিবাহিত নারী-পুরুষের সম্পর্ক হলো পরকীয়া। এই সম্পর্কের ভিত্তি অবশ্যই যৌনতা, শরীরী।মজার বিষয় হলো পরকীয়া শব্দটির সাথে পুরুষের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। পরকীয়া শব্দের মানে পরের স্ত্রী বা বিবাহিত নারী। বিবাহিত নারীর স্বামী ব্যতীত অন্য পুরুষের (বিবাহিত বা অবিবাহিত) সাথে যৌনসম্পর্কে লিপ্ত হওয়াই পরকীয়া। আদালত নারীর যৌন স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার দোহাইয়ে রায়টি পরকীয়াকে দিয়েছে।

একটি পাবলিক পারসেপন হলো, বাংলাদেশের সমাজে পরকীয়া ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। বেড়েছে পতিতাবৃত্তি, ছদ্মপতিতাবৃত্তি ও অবাধ যৌনতা।যাদের চোখকান খোলা তারা এই পারসেপশনের পেছনে সত্যতা খুঁজে পাবেন।মূল্যবোধ ও নৈতিকতাধসের জন্যে অনেকে দায়ী করেন ভারতীয় সিরিয়াল, টিভি চ্যানেল ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে। এ কথাও খানিকটা সত্য। এটা পরের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজের দোষ চাপা দেওয়ার মতোই অনেকটা।

একসময় নিষিদ্ধপল্লি ছিল শহরে। শহরের নির্দিষ্ট জায়গা পবিত্র করার নামে গোটা শহরকে আমরা অলিখিত পতিতালয়ে পরিণত করেছি কি-না সেটা ভেবে দেখা দরকার। কয়েকবছর আগে মগবাজারের একটি হোটেলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অনেক নারী-পুরুষকে আটক করেছিল। নারীদের মধ্যে পেশাদার পতিতার বাইরের ছিল মধ্যবিত্ত গৃহবধূ, বিশ্ববিদ্যালযের ছাত্রী, বড়লোকের আদুরে কন্যা। ইত্তেফাক পত্রিকা তাদের সাক্ষাৎকারভিত্তিক একটি রিপোর্ট করেছিল। বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষার্থী বলেছিল সে শপিং, বাড়তি খরচ ইত্যাদি জোগাড়ে এ পথে। মধ্যবিত্তের গৃহবধূ সংসারে সচ্ছ্বলতা আনতে এবং ধনীর দুলালী এসেছিল এমনি এমনি, মানে তার টাকার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নতুন নতুন যৌনসঙ্গীর, প্রয়োজন যৌনতায় বৈচিত্র্য।

আমাদের মধ্যে এ নিয়ে এক ধরনের ট্যাবু সক্রিয়। নৈতিকতার সর্বনাশ দেখেশুনেও চুপ থাকাটাকে নৈতিকতা মনে করার একটা স্ববিরোধী প্রবণতা স্পষ্ট। নিজেদের শ্লীল রাখতে অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দিতেও আমাদের বাধে না।

আমাদের পরিচয় ও স্বকীয়তার সংকট এখন তীব্র। আমরা একদিকে বিশ্বনাগরিক অন্যদিকে বাংলাদেশের নাগরিক। একদিকে আমরা বাঙালি সংস্কৃতির ধারক, অন্যদিকে ইসলামি সংস্কৃতির তমুদ্দুনেও ঘাটতি নেই। গ্লোবালাইজেশনের স্রোতে আমরা পশ্চিমা সংস্কৃতিতেও অবগাহন করতে শিখেছি। ফলে আমাদের মনোজগতে একটি বিকৃতি বাসা বেঁধেছে। আমরা না আছি মুসলমান, না আছি বাঙালি, না হয়ে উঠেছি পশ্চিমা। আমাদের স্ববিরোধিতা ও ভণ্ডামি সর্বক্ষেত্রে।

আমরা বিবাহপূর্ব যৌনতাকে স্বীকার করেও কুমারিত্বকে ধরে রাখতে চাই, নিজে বহুগামিতায় লিপ্ত থেকে নিজের স্ত্রীকে সতী ও পতিব্রতা দেখতে চাই, পতিব্রতা থেকেও পরকীয়ায় মজতে চাই। আমাদের ইসলামি জজবার জোশে বেহুঁশ হবার অবস্থা হলেও ঘুষ পেলে হুঁশ থাকে না। সারাদিন ইসলামের আদর্শকে রক্তাক্ত করার ফিকির করে রাতভর করি জিকির।

বিচারিক আদালতের চেয়ে বড় আদালত মানুষের বিবেক, তার শিক্ষা, তার ধর্মীয় অনুশাসন। মানুষ যদি তার ভেতরের আদালতের কাঠগড়ায় নিজেকে দাঁড় করাতে শেখে তাহলে বিচারিক আদালতের রায় প্রাসঙ্গিক থাকে না। কিন্তু ভেতরের আদালত যদি নিষ্ক্রিয় হয় তাহলে বিচারিক আদালতের বিশেষ কোনো রায় মানুষকে অধিকতর ধংসোন্মুখ করতে পারে। ভারতীয় আদালতের রায় এমন আশঙ্কাকে উস্কে দিতে বাধ্য।

বলে রাখা ভালো যে, যে-কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে ভারতে পরকীয়া, দাম্পত্যকলহ, নারীনিগ্রহ ও যৌন-অপরাধ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থা ভারতের চেয়ে মোটেই ভালো নয়।

কিন্তু সমাজের এদিকটি নিয়ে কারো কোনো উদ্বেগ নেই।

লিখেছেন: ফাতিহুল কাদির সম্রাট
সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা
১৬তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)
➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖
ওয়াদুদ খানের সাড়া জাগানো উপন্যাস কিনতে এখানে ক্লিক করুন...   
অথবা, ডায়াল করুন:
📞📞📞 ০১৬৭৩-৫৯৪৫৭৯  এই নাম্বারে...

➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖➖
Previous
Next Post »