শিক্ষকদের কি ইন্টারনেট চালাতে হয় না? ||| কলাম


ওয়াদুদ খান | কবি ও কথাশিল্পী

সম্প্রতি (০৪ জুন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে "সরকারি টেলিফোন, সেলুলার, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট নীতিমালা, ২০১৮" শিরোনামে একটি সময়োপযোগী নীতিমালা জারি করা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা (বর্তমানে 'কর্মকর্তা' শব্দটি আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। একারণে কর্মকর্তার স্থলে ইচ্ছে করেই 'কর্মচারী' লেখা হয়েছে।) এতে খুশি হয়েছেন। কেননা, গ্রেড-১ থেকে শুরু করে গ্রেড-৯ পর্যন্ত সরকারি কর্মচারীরারা মাসিক "মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতা" পাবেন। এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তরের প্রধানগণ। সবই শুভ উদ্যোগ। সরকার নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
বরাবরের মতো এই নীতিমালাতেও উপেক্ষিত থেকে গেছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মচারীবৃন্দ। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ  ও অধ্যাপক ছাড়া শিক্ষা ক্যাডারের আর কোনো কর্মচারী এই সুবিধা পাবেন না। কারণ, তাঁরা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নন। অথচ, অন্যান্য ক্যাডারের ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাচ্ছেন গ্রেড-৭ থেকে গ্রেড-৯ এর কর্মচারীগণ। যেমন: উপজেলা পর্যায়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এই সুবিধা পাচ্ছেন, কেননা তাঁর একটি অফিস রয়েছে যদিও তাঁর বেতন গ্রেড-৯।
যেহেতু ক্যাডার শিক্ষক কর্মচারীদের নিজস্ব কোনো অফিস নেই, তাই তাঁরা গ্রেড-৫ কিংবা গ্রেড-৬ এর কর্মচারী হয়েও "মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতা" প্রাপ্য হবেন  না। একটি সরকারি কলেজে ২০০জন শিক্ষক কর্মচারী (ক্যাডার শিক্ষক) কর্মরত থাকলেও অফিস পরিচালনা করে থাকেন মাত্র দুজন- অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ। কাজেই এই দুজন কর্মচারী ও পদমর্যাদার কারণে অধ্যাপকদের উপরিউক্ত সুবিধা প্রদানই কর্তৃপক্ষের নিকট যথেষ্ট মনে হয়েছে।
শিক্ষকদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে পাঠদানে দক্ষ করার মানসে সরকার আইসিটি কোর্সের পেছনে  ইতোমধ্যে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে। অথচ, শিক্ষকদের একটি করে আধুনিক ল্যাপটপ কিনে দিতে পারেনি। শিক্ষকদের ল্যাপটপ নেই, ট্যাবলেট পিসি নেই, এমনকি অনেকের মোডেম কিংবা স্মার্ট ফোনও নেই। অথচ, কোনও কোনও শিক্ষক তিন-চারবার আইসিটি ট্রেনিং সম্পন্ন করে ফেলেছেন।
শিক্ষকদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে পাঠদানে দক্ষ করার অভিপ্রায়ে প্রায়শ বলা হয়ে থাকে, "একজন শিক্ষক হবেন পুরোপুরি ডিজিটাল। তিনি গুগলে সার্চ দিয়ে বের করে আনবেন হালনাগাদ কিন্তু সঠিক ও নির্ভুল সকল তথ্য। তিনি ইউটিউবে সার্চ দিয়ে ডাউনলোড করে নিবেন তার প্রয়োজনীয় ভিডিও ম্যাটেরিয়ালস। ভিডিও এডিটিং, কাটিং, পেস্টিং খুব সুন্দর করে শিখে নিবেন। একজন শিক্ষক মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্টে হবেন সুদক্ষ। ক্লাসরুমে বড়ো মনিটরে ক্লাস নিতে পারঙ্গম হবেন একজন শিক্ষক কর্মচারী।"
আইসিটি ট্রেনিংয়ের কল্যাণে অনেক শিক্ষক যুগোপযোগী ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করে ইতোমধ্যে সাড়াও ফেলেছেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো- সরকার শিক্ষকদের "মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতা" থেকে উপরিউক্ত নীতিমালায় বঞ্চিত করেছে।
আমরা যদি একটু গভীরভাবে অনুধাবন করি, তাহলে দেখতে পাবো- থানার একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) চেয়ে একজন শিক্ষকের মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার কম প্রয়োজনীয় নয়। একজন শিক্ষককে যোগাযোগ রক্ষা করতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে।
একজন শিক্ষক কেন নিজ পকেটের টাকা খরচ করে গুগলে ঢুকবেন, ইউটিউবে সাঁতরাবেন, রাত জেগে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করবেন, যেখানে সেই শিক্ষকটিকে দেয়া হয়নি একটি ল্যাপটপ, ট্যাবলেট কিংবা কম্পিউটার? আবার শিক্ষকদের বাড়তি উৎসাহ দেওয়ার জন্য দেয়া হচ্ছে না "মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতা"।
শিক্ষকদের কর্ম পরিবেশের বৈশিষ্ট্যই এমন যে, সবাই একই সাথে অফিস প্রধান হবেন না। সবার অফিস থাকা জরুরিও নয়। এর মানে নয় যে তাঁদের মোবাইল ও ইন্টারনেট চালানোর প্রয়োজন নেই।
আশাকরি, আমার লেখাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে এবং তাঁরা দ্রুততম সময়ে নীতিমালাটির সংশোধনী এনে সকল শিক্ষক কর্মচারীদের "মোবাইল ও ইন্টারনেট ভাতা" প্রদান করা হবে।
ভুলে গেলে চলবে না, এটি শিক্ষকদের প্রতি কোনো দয়া নয়; বরং তাঁদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার।
আর কতকাল হাজারো বঞ্চনার শিকার একালের শিক্ষকরা থেকে যাবেন সেকেলে?

প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ
সদরপুর সরকারি কলেজ, ফরিদপুর 

যারা আইবাস প্লাস প্লাসে লগইন করতে পারছেন না, তাদের জন্য নিচের ভিডিও লিংকটি.... 
Previous
Next Post »