পুরুষাঙ্গ ব্যবহারের দায় নিচ্ছে না কোনো পুরুষ

এক পাগলীর মা হয়ে ওঠার নির্মম কাহিনি:




গতকাল একটা রেইপ ইস্যু নিয়ে লিখে সবার মন খারাপ করে দিয়েছিলাম। দুএকজন গালমন্দও করেছেন ঘটনাটিকে দিনাজপুরের ইন্ডিয়ার সাইডের বলে, যদিও তার পক্ষে কোন প্রমাণ দিতে পারেননি।
বাদ দিন।

আজকের এ ঘটনাটি এ আমার প্রিয় বাংলাদেশেরই। এটা সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হয়েই লিখছি।

এই যে ফুটফুটে দেবশিশুটি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মিটিমিটি হাসছে, গতকাল একুশের প্রথম প্রহরকে  জাস্ট কয়েক ঘন্টা সামনে রেখেই তার জন্ম।

শিশুটি জন্ম নিয়েছে রাস্তার ধারে এক বালির মাঠে, তাও সালমা নামে এক পাগলির গর্ভে। রাতের আঁধারে সন্তান সম্ভবা এক পাগলী মায়ের প্রসব বেদনার গগনবিদারী চিৎকার ভারি করে তুলছিল শিবচরের সে জনপদ।

এমন রাত্তিরে একটি নির্জন জায়গা থেকে চিৎকারের শব্দ  শুনে শব্দকে গন্তব্য করে ছুটে গিয়েছিল কিছু মহৎ তরুণ। গিয়ে তাদের চক্ষু চড়কগাছ। এ প্রসববেদনায় চিৎকাররত পাগলী মাকে দেখে।
ততক্ষণে বাচ্চাটি প্রায় ভুমিতে এসে পড়েছে...।

হুট করে এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে প্রথমে সবাই কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়লেও মুহুর্তেই তারা সামলে নিল। এদিক ওদিক ফোন দিয়ে জেনে নিল এ সময়টায় কি করতে হবে, আর তারপর চলল পরবর্তী কাজে হাত দেয়া...
শিশুটির নাড়ি লেগে আছে পাগলির নাড়িতে, সারা গাঁ রক্ত আর বালিতে একাকার।
পাগলী মায়ের চোখ তখন সন্তানের দিকে, তার চোখে হাসিকান্না মিশ্রিত আনন্দাশ্রু।

বন্ধুদের দুএকজন ছুট লাগাল অদূর লোকালয়ে, ডেকে আনল কিছু মহিলাকে, এ যে মহিলাদের কাজ। কিন্তু পাগলি বলে কথা, মহিলাদের অনেকে এসে জড়ো হলেও কেউ শিশুটির নাড়ি কাটতে রাজি হচ্ছিলেন না। একজন বন্ধু ডাক্তার ডাকলেন, রাতের আঁধারে এ নির্জনে এক পাগলির সেবায় আসতে প্রথমে তিনি আপত্তি জানান, এরপর চলে আসেন...  । ফলাফল বাচ্চা আর পাগলি মা হাসপাতালে...

ছবিতে এই মহাজজ্ঞের নায়ক অমি এবং তার টিমকে দেখতে পাচ্ছেন। হ্যা, এই অমিদের শরীরের গড়নটাও গতকালের লেখা রেপিস্টদের মতই..... বাট কাজটা????

আমি আসলে বুঝতে পারছিনা,  অমিদের বীরত্বের কথা ভেবে গর্ববোধ করব, নাকি পাগলী কে মা বানিয়ে দেয়া পিশাচটার কথা ভেবে লজ্জিত হব। আমি  আসলেই বুঝতে পারছিনা....

আমি জানতে চাইব না এই পাগলী কিভাবে মা হল, আমি জানতে চাইব না এই শিশুর পিতৃপরিচয় কি? আমি জানতে চাইব না কোন পিশাচের নির্মম নির্যাতনের  শিকার এই পাগলী মেয়েটি?

শুধু জানাতে চাইব, এ দেশে পাগলীকে মা বানিয়ে দেবার পেছনে যে অমানুষটি আছে, সে অমানুষের আদল নিয়েই এ দেশের আনাচ কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পাগলীর সন্তানকে সুন্দরভাবে পৃথিবীর আলোয় এনে দেওয়া অমিরা।

জাস্ট একটু সন্মান দিন ওদের! একটু ভালবাসুন! তাতে হয়ত প্রতিটি পরিবার ই হেসে উঠবে এমন এক একটা অমির হাসিতে। যে হাসিতে একদিন হাসবে গোটা বাংলাদেশ।

গতকাল নিজের শরীরের দিকে তাকাতে পারিনি সেই ঘৃণ্য রেপিস্টদের কথা মনে করে.... আজ অমির কথা ভেবে ভাল লাগছে কিছুটা।

হ্যাটস অফ অমি, সাগর, ইব্রাহীম, আজিজ ভাই এবং পুরো টিম। আপনাদের নিয়েই তৈরি হোক আগামীর বাংলাদেশ।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আপাতত ভাল থাকুক ভাষাকন্যা আর তার অসহায় পাগলী মা....

লেখা: ওয়াজেদ মহান
২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৮
ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত

বিজ্ঞাপন:

বই কিনুন। বই কিনে নাহয় দেউলিয়া হোন। তবুও খুঁজে নিন রস।
কুরিয়ারে পেতে পারেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ওয়াদুদ খানের সকল বই।



Previous
Next Post »