নতুন সাড়ে ১২ হাজার পদ সৃষ্টি হচ্ছে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রশাসনে কমপক্ষে চারটি পদ জাতীয় বেতন স্কেলের প্রথম গ্রেডে পদোন্নতির মাধ্যমে পুরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত কর্মকর্তাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ২য় গ্রেড পাচ্ছে আরও ৭টি পদ। আর ৩য় গ্রেড ৪৮ থেকে বাড়িয়ে ৫২৪টি করা হচ্ছে। এই পদগুলো সৃষ্টি হলে শিক্ষা ক্যাডারের পদ সংকট দূর হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এ নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছেন। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো পদ সংযোজন-বিয়োজন করে একটি কাঠামো ঠিক করে দেয়। গতকাল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে এক বৈঠকে খুঁটিনাটি আরও সংশোধন-পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করা হয়েছে প্রস্তাবটি। এটি এখন জনপ্রশাসন হয়ে যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এর পর সচিব কমিটির অনুমোদনের পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
চূড়ান্ত করা নতুন প্রস্তাব অনুসারে, নতুন ১২ হাজার ৫৮৮টি পদের মধ্যে অধ্যাপক থাকছেন ১ হাজার ৩৮৫ জন, সহযোগী অধ্যাপক ৩ হাজার ৩৫৬ জন, সহকারী অধ্যাপক ৪ হাজার ৩৫১ জন এবং প্রভাষক হবেন ৩ হাজার ৪৯৬ জন। বর্তমানে ১৫ হাজার ৪১টি পদের মধ্যে অধ্যাপক রয়েছেন ৫৩৩, সহযোগী অধ্যাপক ২ হাজার ২১২, সহকারী অধ্যাপক ৪ হাজার ২৮৬ এবং প্রভাষক ৮ হাজার ৩০ জন।
জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান ও 'জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি'র (নায়েম) মহাপরিচালক পদটি শিক্ষা ক্যাডারের তৃতীয়, কখনওবা চতুর্থ গ্রেডের অধ্যাপকরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কলেজ ও মাধ্যমিকের দুইজন পরিচালক একইভাবে চলতি দায়িত্ব দিয়ে নিয়োগ দেয় সরকার। এখন এই চারটি পদ তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দেওয়া হবে। ফলে এখানে যে কাউকে আর বসানো যাবে না। সিনিয়রিটির ভিত্তিতে ৩য় গ্রেডের অধ্যাপকরাই এখানে পদায়ন পাবেন। পদ সোপান তৈরি করে শিক্ষা ক্যাডারে ৭টি পদ দ্বিতীয় গ্রেডে দেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দ্বিতীয় গ্রেডের জন্য প্রথমে ৪৬টি, পরে ৪০ পদ চাওয়া হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেটি ৭টি নির্ধারণ করে দিয়ে অনুমোদন দিয়েছে। আর তৃতীয় গ্রেডে ৪৮টি থেকে বাড়িয়ে ৫২৪ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘ ৪৭ বছরের ইতিহাসে শিক্ষা ক্যাডারে এ কাজ হয়নি।
তৃতীয় গ্রেড থেকে দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হবে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে।
এখানে শিক্ষা ক্যাডারে যোগদানের তারিখ ধরে এ সিনিয়রিটি দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর মো. মাহাবুবুর রহমান মঙ্গলবার সমকালকে বলেন, তারা মন্ত্রণালয়ে সভা করে প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছেন। শিগগিরই তা অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিললে এর পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
মহাপরিচালক বলেন, এরশাদ সরকারের আমলে প্রণীত এনাম কমিটির সুপারিশ ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী বর্তমানে সরকারি কলেজগুলো চলছে। এ জনবল কাঠামোতে বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিটি বিষয়ে অন্তত ৪ জন শিক্ষক থাকার কথা। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে শিক্ষার বিস্তার ও শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে শিক্ষক প্রয়োজন ৮ থেকে ৯ জন প্রতিটি বিভাগে। তিনি বলেন, সারাদেশে তিন শ'র বেশি সরকারি কলেজে প্রচুর শিক্ষক পদ শূন্য। তবে তারা যেটুকু আপাতত না হলেই নয়, সেটুকু পূরণের জন্য জনপ্রশাসনে প্রস্তাব পাঠাচ্ছেন।
অধ্যাপক মো. মাহাবুবুর রহমান আরও বলেন, নতুন পদ সৃষ্টির পাশাপাশি বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে জাতীয় বেতন স্কেলের ওপরের গ্রেডগুলোতে যাওয়ার সুযোগ কমে গেছে। দ্বিতীয় গ্রেডে শিক্ষা ক্যাডারের কোনো পদ নেই। আগের বেতন স্কেলের সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে দেওয়ায় এই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের তৃতীয় গ্রেডে যাওয়ার পথও রুদ্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়েও তারা সুপারিশমালা প্রস্তুত করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে বর্তমানে পদ রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১৩ হাজারের মতো শিক্ষক। বাকি দুই হাজার পদ শূন্য রয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজগুলোতেই শিক্ষক পদ শূন্য বেশি। ফলে ওইসব কলেজে মানসম্মত শিক্ষাদান হোঁচট খাচ্ছে। শুধু তৃণমূল পর্যায়েই নয়; খোদ রাজধানীর সরকারি কলেজগুলোও শিক্ষকশূন্যতায় ধুঁকছে। সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও বাঙলা কলেজে শিক্ষক সংকট তীব্র। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কবি নজরুল সরকারি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানে পদ রয়েছে চারটি, শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন দুইজন। রসায়নে পদ চারটি, শিক্ষক রয়েছেন দুইজন। গণিতে চারটি পদের মধ্যে একটি শূন্য। অথচ এই বিভাগগুলোতে অনার্স, মাস্টার্স, ডিগ্রি- সবই চালু রয়েছে। এত স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক নিয়ে পাঠদান করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বিভাগগুলো। যে কারণে রাজধানীর সরকারি কলেজগুলো কোনো কোনো বিভাগে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বাইরে থেকে ভাড়া করা শিক্ষক এনে ক্লাস পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি ও রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আইকে সেলিম উল্লাহ খন্দকার সমকালকে বলেন, ১৯৮৩ সালে তৈরি করা জনবল কাঠামো অনুযায়ী সরকারি কলেজগুলো চলছে। ৩৫ বছরের পুরনো এ জনবল দিয়ে বর্তমানে সরকারি কলেজ পরিচালনা করা অসম্ভব। একটি বিসিএসে যে সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়, দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে ওই সময়ের মধ্যে তার চেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষক অবসরে চলে যান। তাই শিক্ষকের সংকট থেকেই যাচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষাদান করতে চাইলে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে এ সংকটের সমাধান একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
ওয়াদুদ খানের সকল উপন্যাস পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় ৪৭৫-৪৭৮ নাম্বার স্টলে। কুরিয়ারে পেতে কল করুন: ০১৭৮৫-৫৬২০৮০ এই নাম্বারে।
অ্যাডস বাই গুগল ডট কম |
EmoticonEmoticon