এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে হইচই কম হচ্ছে না। হইচই হলেই তো আর উন্নতি হয় না। শিক্ষার মান যে কমতে-কমতে তলানিতে গিয়ে ঠেকছে— এটা শুধু প্রাজ্ঞজন নয়; জানেন অজ্ঞজনও। জেনে লাভটা কী?
শিক্ষার মান উন্নত করতে হলে— হাত দিতে হবে গোড়ায়। কিন্তু গলদটা তো ওই গোড়াতেই।
কোয়ালিটি-এডুকেশনের কথা বলতে-বলতে মুখে ফেনা তুললেও, কোয়ালিটি-টিচারের কথা অতটা শোনা যায় না। অথবা, কোয়ালিটি-টিচার কথাটি বলা হয় মিনমিনিয়ে, ফিসফিসিয়ে। কেননা, কোয়ালিটি-টিচার কথাটি বললে— থলে থেকে বেরুতে চায় বিড়াল।
বাঘের মতো দেখতে হলেও বিড়াল যে বাঘ নয়, আর ছাগলের কাঁধে জোয়াল তুলে দেয়া গেলেও— হালচাষটা যে হয় না— এটা বোঝে সবাই। শুধু বোঝে না— ডিসকোয়ালিফাইড টিচার দিয়ে কোয়ালিটি-এডুকেশন অসম্ভব।
এদেশের শিক্ষকরা কি তবে ডিসকোয়ালিফাইড?
ঢালাওভাবে আমি এটা স্বীকার করব না। কিন্তু, এটাও তো সত্যি— কোয়ালিটি টিচারের ঘাটতিও নেহাত কম নয়।
এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কি সামনের দিকে এগুচ্ছে, নাকি বানরের তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উপরে ওঠার মতো— একটু এগিয়ে আবার নিচে নেমে যাচ্ছে? বিজ্ঞমহল বিষয়টি অবশ্যই ওয়াকিবহাল।
শিক্ষকতায় কাদের আসা উচিত?
অবশ্যই এদেশের সেরা বিদ্যাপীঠ থেকে বের হওয়া সেরা শিক্ষার্থীদের এই পেশায় আসা উচিত।
কিন্তু আসছে কারা?
সেরারা তো অবশ্যই নয়।
সেরারা আসে না কেন?
সেটাই ভাবতে হবে রাষ্ট্রকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক কেউ কি তার পেশায় সন্তুষ্ট?
তারা কি হতাশ নয়?
কেন হতাশ?
এটা নিয়েও ভাবতে হবে রাষ্ট্রকে।
এখন বলি, বিসিএস ক্যাডার শিক্ষকদের কথা। এই তো বছর দশেক আগেও, অনেক চৌকস মেধাবী শিক্ষার্থী প্রথম চয়েস হিসেবে শিক্ষকতাকে রাখত।
ইদানীং কী হচ্ছে?
দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া, শিক্ষা ক্যাডারকে রাখা হচ্ছে পছন্দক্রমের তলানিতে।
ক্যাডার বৈষম্য কতটা প্রকট হলে, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-কৃষিবিদ পর্যন্ত প্রফেশনাল ক্যাডার ছেড়ে প্রশাসন-পররাষ্ট্র-পুলিশ ক্যাডারের জন্য আবেদন করে।
দিন শেষে ক্ষতি হচ্ছে কার?
আর শিক্ষা ক্যাডারের অবস্থাটা কোন পর্যায়ে গেছে— একটা বাস্তব উদাহরণ দিলে বুঝা যাবে। সোনালি ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পেয়েছিল ছেলেটি। কয়েকটি ইনক্রিমেন্ট পেয়ে স্যালারি কেবল দাঁড়িয়েছে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার সমান। এখনো কোনো প্রমশোন পায়নি। সেই ছেলেটি নিয়োগ পেল শিক্ষা ক্যাডারে। যোগদানও করেছিল সে। দিন পনেরো শিক্ষকতা করে চাকরি থেকে রিজাইন করে। ফিরে যায় তার পুরোনো কর্মস্থলে— ব্যাংকে।
এত হতাশ ছিল কেন সে?
কারণটা খতিয়ে দেখা— রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
বয়স ও সুযোগ থাকলে, একের পর এক বিসিএস দিয়ে— শিক্ষা ক্যাডার ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য ক্যাডারে। এই তালিকাটি কিন্তু ছোট্ট নয়। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার সমান দীর্ঘ।
আমরা কোন দিকে এগুচ্ছি?
শিক্ষকদেরকে বঞ্চিত রেখে, হতাশ রেখে আদৌ কি কোয়ালিটি-টিচার খুঁজে পাওয়া সম্ভব?
কোয়ালিটি-টিচার ছাড়া কোয়ালিটি এডুকেশন কি অশ্ব-ডিম্বের মতোই কিছু একটা নয়?
ওয়াদুদ খান
৪ জুলাই, ২০২০
EmoticonEmoticon