প্রতি বৎসরের ন্যায় বিতর্ক ভালোই জমিয়া উঠিয়াছে। আরও সরলীকরণ করিলে বলা যায়- বিতর্ক জমিতে জমিতে ক্ষীর। আগামীকাল পহেলা বৈশাখ। ষোলো কোটি মুসলমানের দেশে এইসব প্রথা, কু-প্রথা, আচার, সংস্কৃতি, শোভাযাত্রা, মুখোশ, লাল-শাদা ড্রেস, ঐতিহ্য- সবই "বিলকুল হারাম" বলিয়া চতুর্দিক হইতে ফাতওয়া আসিতেছে। শবে মিরাজ নাকি পহেলা বৈশাখ- তাহা নিয়াও ভোটাভুটি চলিতেছে। মসজিদে মুসুল্লির সংখ্যা কমিয়া গেলেও, এইসব ইশ্যুতে ফাতওয়া দেওয়ার লোকের অভাব নাই। দিনান্তে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় না করিলেও, জিহাদি চেতনায় তাহারা উদ্বুদ্ধ। তাহাদের (অ)যৌক্তিক উক্তি, "মিয়া, সালাত আদায় না করিলেও ইমান আমাদের সাচ্চা। পহেলা বৈশাখের নামে এইসব ইতরামি, বাদরামি, বেলেল্লাপনা, অশ্লীলতা, জিনা, ব্যভিচার, ধর্ষণ, ন্যাংটা নাচ, আউল ফাউল গান- বন্ধ করিবার জন্য জান দিতে আমরা সদা প্রস্তুত। এই দিনে কেবল বিতাড়িত শয়তান ইবলিশ মজা করে খাইতে পারে পান্তা-ইলিশ।"
পহেলা বৈশাখ হারাম কারণ এইটা নাকি মুসলমানদের অনুষ্ঠান নয়। দুই ঈদ ছাড়া মুসলমানদের আর উৎসব দিবস নাই। নওরোজ নাই। থার্টি ফার্স্ট নাইট নাই। পহেলা বৈশাখ নাই। পান্তা-ইলিশ নাই। এইসব হারামে যাহারা আরাম খুঁজিয়া লইবে, তাহাদের গন্তব্য চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
দিনে তিনবেলা এতদিন যাহারা বৃক্ষের আগায় উঠিয়া মুতিয়া দিত, তাহারাও ছাড়িতেছে ফাতওয়া। এইসব বিতর্কে, কুতর্কে যুক্ত হইয়াছে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত, ধার্মিক, বক-ধার্মিক- প্রায় সবাই।
ফেসবুকে আমার নিউজফিড ফুলিয়া ফাঁপিয়া উঠিতেছে। "মালাউনদের অনুষ্ঠান" বলিয়া অনেকে শ্রাব্য, অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করিতেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, পহেলা বৈশাখ কিংবা বাংলা সনের প্রবর্তন কোনো হিন্দু করিয়াছিল। সম্রাট আকবরকে হিন্দু না বলিলেও, অনেকেই নাস্তিক, বেইমান বলিয়া তাহাকে নরকে পাঠাইয়া দিতাছেন।
কিন্তু, আগামীকাল তো হিন্দুদের পহেলা বৈশাখ না। যাহারা নিয়মিত গঞ্জিকা সেবন করেন, তাহারাও জানেন- পঞ্জিকা অনুসারে, কালকে ১৪ এপ্রিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চৈত্র সংক্রান্তি। ১৫ এপ্রিল তাহাদের পহেলা বৈশাখ। এই অধমের জানামতে, কোনো হিন্দু ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালন করিবেন না। বাংলাদেশে প্রচলিত বাংলা ক্যালেন্ডার তাহারা অনুসরণ করেন না। তাহারা মানেন পঞ্জিকা। কাজেই মুসলমান ভাইদের এবং ফাতওয়াজীবী বোনদের অনুরোধ করিব- শুধু শুধু হিন্দুদের গালি দিবেন না। কারণ, কালকে তাহাদের চৈত্র সংক্রান্তি। সেখানে আপনাকে যাইতে তাহারা বাধ্য করিবেন না। নিজের ইচ্ছায় যাইবেন, পান্তা খাইতে খাইতে পাতলা পায়খানা করিবেন- আর "মালাউনদের অনুষ্ঠান" বলিয়া গাল দিবেন সেটা হইবে না।
পহেলা বৈশাখে যদি আপনার চুলকানি থাকে, তবে চুলকাইতে চুলকাইতে ঘা বানিয়ে ফেলুন। রাত বারোটা থেকে ইবাদাতে মশগুল থাকুন। পারলে কালকে রোযা থাকুন। কী দরকার ন্যাংটা নাচের খোঁজ খবর রাখার।
নিজেকে বিনোদন বঞ্চিত মনে করিলে, গঞ্জিকা ভরিয়া দুই শলাকা বেশি টানুন।
আরও ভালো হয়, ফেসবুক হইতে লগ আউট করুন।
ওয়াদুদ খান
কবি ও কথাশিল্পী
______________________________
ওয়াদুদ খানের সকল উপন্যাস পেতে
ডায়াল করুন:
০১৭৮৫-৫৬২০৮০
EmoticonEmoticon